Golpo Kotha Live

Oct 4, 2020

মানবকন্যা আমি যে ধন্যা প্রাণের পুণ্যে ভরা:

বিবাহের কোনো চিহ্ন দেহে ধারণ করিনি ---
এই অপবাদটি বিচ্ছেদের অন্যতম বড়ো কারণ ছিল! বয়স অল্প, ভালো করে বুঝতে পারি নি! এখন খুব হাসি পায়।প্রায় দুই যুগ আগে বিবাহের যজ্ঞে বসেছিলাম আর আমার বাবা কন্যাদান করেন নি। বাবার কাছে কন্যা দানের বস্তু নয়, মানের। যতোদিন মান প্রতিষ্ঠিত থাকবে ঠিক ততদিনই তার কন্যাকে তারা পাবে, মানহীন হয়ে একমুহূর্ত নয়। যে বিবাহ শুধু অবহেলার, অপমানের, অত্যাচারের সে বিবাহও চিহ্ন চায় নির্যাতিত শরীরে! কি বিচিত্র সমাজে বাস আমাদের! যুগ বদলেছে, সময় পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু মানিসিকতা আরো অন্ধকারের অতলে তলিয়ে গেছে।

"যদেতৎ হৃদয়ং তব তদস্তু হৃদয়ং মম। যদিদং হৃদয়ং মম, তদস্তু হৃদয়ং তব।"... খুব একটা সহজ উচ্চারণ নয় কিন্তু সবাই, একেবারে না বুঝেই সবাই উচ্চারণ করে, অনেকটা শিখানো বুলির মতো। হৃদয় বিনিময় এতোই সহজ, যে মন্ত্র উচ্চারণের সাথে সাথেই তা বদলে যাবে। শুধুমাত্র হৃদয় বিনিময়ের পরেই এ মন্ত্র উচ্চারণ সম্ভব নচেৎ কখনো নয়। তাই তো ঋষিকন্যা সূর্যা, আনন্দ দেবতা সোমকে হৃদয় সমর্পনের পরে নিজের বিবাহ উপলক্ষে এই বিবাহ মন্ত্র রচনা করেছিলেন! সূর্যা হলেন ধরিত্রী যিনি ধারণ করেন, রক্ষা করেন, মঙ্গল করেন। প্রতিটি মেয়ে উচ্চারিত বিবাহ মন্ত্রে সেই মঙ্গলময়ী স্বরূপা হয়ে উঠে এই আনন্দ দেবতা রূপের পুরুষকে অন্তরে বাহিরে আপন করতে চায়, তার কাছে নিজেকে সমাপন করতে চায়। যেমন সূর্যা আর সোম পরস্পর পরস্পরকে চেয়েছিলেন অন্তরে, বাহিরে। সে বিয়েতে উপঢৌকন ছিলো অন্তরের প্রেম, মন ছিলো যার রথ, রথের চাকা ছিলো কালচক্র যার অধীশ্বরী হয়ে সূর্যা গেলেন সোমের ঘরে। এই মন্ত্র উচ্চারণ কি এতোই সহজ?


যুগে যুগে এ মন্ত্র উচ্চারণে পুরুষদের যে কন্যা প্রাপ্তি ঘটে, তাঁরা নিজেরাই জানেন না যে অজান্তে তাঁরা ধরিত্রীকে পেয়েছেন। ধরিত্রী যদি নিজে না ইচ্ছে করে তবে তাকে গ্রহন বা বর্জন, স্বীকার বা অস্বীকারের অধিকার পুরুষকে কে দিল? তবে কিসের বিয়ের চিহ্ন ধারণ, কিসের সিঁদুর আর শাঁখা পলা ধারণ করা?
আর্য সমাজের কন্যারা সিঁদুর পরতেন শক্তির প্রতীক হিসেবে আর কুমারী মেয়েরা শাঁখা পরতেন দেহ-মনকে শীতল করতে। শাঁখা আমার কাছে আর পাঁচটি অলংকারের একটি, ইচ্ছে হলে পড়ব ইচ্ছে হলে খুলব। আর সিঁদুর ও ঠিক তাই -- তাকেও ধারণ করা না করা আমার ইচ্ছে, একান্ত নিজের নিয়মে। ভাবতে ভীষণ অবাক লাগে আজও এই মন্ত্র আটক হয়ে পরে থাকে পুরোহিতদের ভ্রান্ত উচ্চারণের দুর্বোধ্য কিছু শব্দ হয়ে, আর সমাজ চলে কিছু মিথ্যা উদ্ধত রীতি আর দাম্ভিক নিয়মের জগদ্দল পাথর বয়ে নিয়ে। তাই কন্যা আজও এ সমাজে দানের সামগ্রী, মানের সম্পদ নয় !!

No comments:

Post a Comment

Please do not any spam in the comments Box.

Please Subscribe For My YouTube

গল্প কথা


আজকের শিশু আগামি দিনের ভবিস্যৎ.........









Contact Us

Name

Email *

Message *